লকডাউন v/s নববর্ষ - BBP NEWS

Breaking

বুধবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২০

লকডাউন v/s নববর্ষ


মাসুদূর রহমান

সকাল হতে না হতেই ১৪ই এপ্রিল দিন বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। এক শুভ বাংলা নববর্ষ উদযাপন আর দুই প্রথম পর্যায়ের ২১ দিনের লকডাউন উঠে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় পর্বের লকডাউন এর জন্য জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ। এই দুই অসম দড়ি টানাটানিতে দিনের শেষে কে বিজয় তিলক পড়ল সেটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথমেই বাংলা নববর্ষের কথায় আসা যাক। বাঙালি ভোজন রসিক বাঙালি বলে পরিচিত। সেই বাঙালি এই দিনে সাত সকালে হাতে বাজারের থলি নিয়ে বাজারে গিয়ে পৌঁছায়। সকাল দুপুর এবং রাতে কবজি ডুবিয়ে খাওয়ার জন্য লুচি মিষ্টি মাংস পোলাও জন্য বাজারে বেরোলেই তো আর হবে না। তাই যথারীতি নিয়ম মেনে লাইন ও দিতে হবে, কিন্তু মাংসের দোকানে গিয়ে লাইন দিয়ে মাংস কেনা বাঙালির কোনদিনই অভ্যাস ছিল না ।তাই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নিয়ম লঙ্ঘন করলেন। আর তার ফল হল পুলিশের তাড়া খাওয়া। কারো পিঠে দুই এক ঘা পুলিশের ডান্ডা উপরি হিসাবে পড়ল। শুধু তাই নয় জনতা পুলিশের বেশ কিছুক্ষণ সময় লুকোচুরি ও চলল। অন্যদিকে রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে বাইরে বেরোলেই অত্যাবশ্যক মাস্ক। তাই যাদের যাদের নেই তাদের কেও এই বৈশাখের চড়া রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে থাকতে হল। এবার আসা যাক বাঙালির অন্য এক সেন্টিমেন্টের কথায় যেহেতু নতুন বছরের প্রথম দিন, তাই কোনদিনই বছরের এই প্রথম দিনটাতে কোন বাঙালি ভুল করেন না যে তাদের আরাধ্য দেব-দেবীর পূজা না দেওয়া‌। এই দিনটা খুব ঘটা করে ধূপ-ধুনো ঘন্টা শাঁখের বাদ‍্যিতে মন্দিরে মন্দিরে ভিড় জমায়।  কিন্তু এবারের নববর্ষে একদমই জনশূন্য ছিল মন্দির প্রাঙ্গণ। কোনরকমে সামান্যতম আয়োজনে নমো নমো করে আরাধ্য দেবী কে তুষ্ট করলেন বাঙালি‌।এদিকে বেলা বাড়ার সাথে  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ ও শেষ হলো‌। আর তারপরেই আসল চিত্রটা প্রকট হল শহর থেকে গ্রাম প্রায় সকলেই একপ্রকার শুভ নববর্ষের জন্য বিক্ষিপ্তভাবে হাটে বাজারে জমায়েত হয়ে গেল। আর এখানেই প্রশ্ন যে দেশ বা রাজ্যের সরকার বারবার ধরে অনুরোধ করছে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া যেন বাইরে না বেরোয়, সেই নির্দেশ কে প্রথমত অমান্য করছেন জনতা, তাছাড়া যে নিয়ম-শৃঙ্খলা অনুসরণ করার কথা বলছে তাকেও একপ্রকার বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে জমায়েত হচ্ছে। কিন্তু আম বাঙালি একবারও ভাবলো না যে জীবন থাকলে এরকম শুভ নববর্ষ জীবনে আরও বহু আসবে। সেই নববর্ষ গুলো আরও সুন্দর রঙিন হয়ে উঠবে। আর জীবনই যদি না থাকে তাহলে সেই জাঁকজমক আড়ম্বর আর কোনদিন আসবেনা। এটা মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও তারা বোঝে না। তাই এর খেসারত এই বুদ্ধিমান বিবেকবান শিক্ষিত মানুষ গুলোকেই দিতে হবে। তাই হয়তো লকডাউন v/s শুভ নববর্ষ পালন ১৪ ই এপ্রিল চলল। তাতে হয়তো বিজয় তিলক পড়েছে বাংলা শুভ নববর্ষ। কিন্তু এর কালো দিকটাই বেশি করে প্রকট হল। যদি জিতে যেত করোনা ভাইরাসের মত মহামারীর প্রকপে পড়ে লকডাউন,তাহলে হয়তো শুভ নববর্ষ হেরে গিয়ে বাংলা ও বাঙালি যে বিজয় তিলক পড়ত এক বাক্যে স্বীকার করে নিতে হয়।

Pages