মাসুদূর রহমান
পৃথিবীর ইতিহাসে লিখিত হলো এক অসহায় আত্মসমর্পণের ইতিকথা। দুই বিশ্বযুদ্ধের কথা পৃথিবীতে যতদিন মানবসভ্যতা থাকবে ততদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেই স্মরণীয় অধ্যায়ে নবতম সংযোজন২০২০-র সারাবিশ্বে ত্রাস সৃষ্টিকারী কোভিড-19 এর আক্রমণ। একা কোভিড-19 নিরস্ত্র,অথচ তারই এক প্রকাণ্ড থাবায় সমগ্র মানব সভ্যতা আজ অস্তিত্ব রক্ষার সম্মুখীন। যে দুঁদে বিজ্ঞানীদের মস্তিষ্কপ্রসূত নতুন নতুন আবিষ্কারে নতুন দিশা উন্মোচিত হয়,তাঁরাই আজ অসহায়। যে ডাক্তারদের মানুষ ভগবানের আরেক রূপ বলে গণ্য করে, তাঁদেরই চোখের সামনে লাখো মানুষের মৃত্যু মিছিল। যে রাষ্ট্রনায়কদের রাজনীতির একটা চালেই কিস্তিমাত হয়ে যায় সমগ্র বিশ্ব, তাঁরা আজ শুধুই নীরব দর্শক মাত্র।যে অপ্রতিরোধ্য শক্তির কাছে পরাজয় স্বীকার করে পাথর হয়ে গেছে স্বয়ং ঈশ্বর আল্লাহ ও গড। সেখানে নগণ্য মানুষের কিবা শক্তি আছে? তাকে তো অসহায়ত্ত্বের চাবুক সবসময়ই খেতে হয়।যেমন আজও এই কঠিন সংকট কালেও সে খেয়ে চলেছে অনবরত।কিন্তু এর দায় কার?কে দেবে এর উত্তর?
বিশ্বজুড়ে নিজ নিজ রাষ্ট্রে নিজ নিজ কায়দায় চলছে লকডাউন। কিন্তু সংকট কাল শিয়রে উপস্থিত হতেই সেই সাধারণ মানুষদের নিয়ে শুরু হয়ে গেছে দড়ি টানাটানি।রুটি-রুজির তাগিদে এক দেশ থেকে অন্য দেশে, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে, এক শহর থেকে অন্য শহরে, যে সাধারণ মানুষ দৌড়েছে, তাতে কি সেই ব্যক্তির নিজের স্বার্থই জড়িয়ে আছে? দেশ বা রাজ্য বা শহরের স্বার্থ কি জড়িয়ে নেই? সেখানেও অসহায়ত্বের তত্ত্ব লুকিয়ে আছে।সেই রাজ্য বা দেশের নাগরিকদের কাজ বা চাকরি দিতে না পারার। শুধু তাই নয় এই দেশের যে শ্রমিকরা খাদ্যের তাগিদে অন্য রাজ্যে আজ দীর্ঘদিন পরিবার নিয়ে বসতি স্থাপন করেছিল। তারাই এখন সেই রাজ্য সরকারের বোঝা হয়ে গেছে। ফলস্বরূপ এই গভীর সংকটকালে কোলের বাচ্চা থেকে শুরু করে শিশু-কিশোর কে সঙ্গে নিয়ে গোটা পরিবার ঘর-সংসার আজ পথে নেমেছে।পায়ে হেঁটেই মাইলের পর মাইল পথ অতিক্রম করে মৃত্যুর মতো কঠিন পরীক্ষা দিয়ে নিজগৃহে নিজরাজ্যে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে। বিদেশে থাকা ভারতীয়দেরও বিশেষ বিমানে জাহাজে করে ফিরিয়ে আনছে সরকার। অথচ যাদের দ্বারা এতদিন সেই দেশ সেই রাজ্য সেই সরকার ফলে ফুলে ভরে উঠছিল,সেই শ্রমিকরা আজ ব্রাত্য। নিষ্ঠুর এ পরিহাসের কোনো সদুত্তর আছে রাষ্ট্রনায়কদের কাছে? অর্থাৎ সংকট কালে শিকড়টাই একমাত্র ভরসা,যা আবারও প্রমাণিত হলো।পারা কি যেতো না মুখ্যমন্ত্রীদের,বিশ্বের প্রধানমন্ত্রীদের,নিজ দেশের বা নিজ রাজ্যের মানুষদের মতো বহিরাগত মানুষগুলোর দায়িত্ব নিতে ? সেখানে কেন এই বৈষম্যের সাক্ষী থাকতে হলো ইতিহাসকে?যে অসহায়ত্বের কাহিনী ইতিহাসে লিখিত হলো, কোনদিন ইতিহাস কি ওই রাষ্ট্রনায়কদের ক্ষমা করতে পারবে? শেষ পংক্তিতে একটা বিখ্যাত গানের কথা মনে পড়ে গেল, "মানুষ মানুষের জন্য... জীবন জীবনের জন্য ...একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারেনা না?"না সত্যিই তারা সহানুভূতি পেতে পারে না। কারণ সহানুভূতি নামক শব্দটা যে অসহায়ের গৃহে বেড়ে উঠেছে।