মাসুদূর রহমান
১৯'শে মার্চ করোনা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন ২২ শে মার্চ রবিবার সকাল ৭ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত জনতা কার্ফু। করোনা মোকাবিলায় ২২ শে মার্চ ই ছিল প্রাথমিক মহড়া।১৯শে মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন,"করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের লোকের কাছে আমি কিছু সপ্তাহ চাই, কিছু সময় চাই।" করোনাকে রোখার জন্য দেশব্যাপী যখন প্রস্তুতি তুঙ্গে তুলেছে, তখন করোনার পরিসংখ্যান কি বলছে তা একটু দেখে নেওয়া যাক। কর্নাটকের কলবুর্গী, দিল্লি, মুম্বাই এর পরে পাঞ্জাবের বাঙ্গা।দেশে চতুর্থ বলি।তখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানাচ্ছে, সারাদেশে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ১৭৩।অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে বলা চলে করোনা তখন সবেমাত্র সলতে পাকাতে শুরু করেছে।
দেশজুড়ে রবিবার ১৪ ঘণ্টার জনতা কার্ফু চলল। আর এরই পাশাপাশি দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলসহ ১৩০ কোটির দেশবাসী সোশ্যাল মিডিয়ায় গর্জে উঠল দেশে লক ডাউন করার জন্য। তাই সেই রাতেই কেন্দ্র সরকার ঘোষণা করল জনতা কার্ফুর পরের দিন থেকেই শুরু হবে লকডাউন। এক মাস পর ২২ এপ্রিল দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে পৌঁছলো ৮৯৮৫ জনে তখন মৃত্যুর সংখ্যা ৬০৩ জন।অর্থাৎ মাত্র ৩০ দিনেই ৫৯৯ জন বেড়ে গেল।এর ঠিক ৩০ দিন পর অর্থাৎ ২২ মে দেশজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে পৌঁছলো ৮৫ হাজারে ।মৃতের সংখ্যাও গিয়ে পৌঁছলো প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি অর্থাৎ আবারও মাত্র ৩০ দিনে এক লাফে ৬০৩ থেকে ৩০০০ এ গিয়ে পৌঁছলো মৃতের সংখ্যাটা।আর আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে পৌঁছলো ১৯হাজার থেকে এক লাখ ৮৫ হাজার এর কাছে।
এবার আসা যাক চলতি মাসের ২২শে জুন তারিখের কথায়। দেশজুড়ে যখন রথযাত্রার আনন্দ-উৎসবে মশগুল ঠিক তার উল্টো দিকে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে পৌঁছলো ৪ লক্ষ ২৫ হাজার ২৮২ জন।মৃতের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৯৯জন। আক্রান্তের সংখ্যার লাফটা ছিল সব থেকে বড়। প্রায় সাড়ে তিন লাখের ওপর আক্রান্তের সংখ্যাটা এক ধাক্কায় বেড়ে গেল। আর মৃতের সংখ্যাও হল আড়াইহাজারে থেকে ১৩ হাজার ৬৯৯। তাই এরকম এক মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে গোটা দেশ যখন করোনা কে সঙ্গী করে,লকডাউনকে ভেঙে আনলকের ওপর দিয়ে যাতায়াত শুরু করেছে তখন এই মৃতের সংখ্যা ও আক্রান্তের সংখ্যা কিন্তু দেশবাসীকে ভাবিয়ে তুলছে।সামনের ৩০ জুন পর্যন্ত লকডাউন। পয়লা জুলাই থেকে যদি কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউনের ক্ষেত্রে আরও কড়াকড়ি না হয় তাহলে প্রত্যেকটি ভারতবাসীর কপালে' চিন্তার ভাঁজ ফেলে সমগ্র দেশকে যে শ্মশানভূমিতে পরিনত করে ফেলবে করোনা তা কিন্তু জুন মাসেই ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছে। তাই করোনা সম্পর্কে এবং লকডাউন সম্পর্কে আরো একবার নড়েচড়ে বসার সময় এসে গেছে। যদি সেই সময়কে হেলায় অতিক্রম করে তাহলে আজ ভারত বর্ষ করোনায় বিশ্বে চতুর্থ স্থানে বসে আছে।সেইদিন খুব দূরে নেই যেদিন দেখা যাবে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যারা এই মুহূর্তে অধিষ্ঠিত তাদের কে পিছনে ফেলে ভারত প্রথম স্থান অধিকার করেছে।আর যদি তা হয়েও থাকে তাহলে সমগ্র দেশ যে চরমতম বিপদের সন্মুখীন হবে তা এখনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।