মাসুদুর রহমান
"আশ্বিনের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি"- কবিগুরুর 'পূজার সাজ' কবিতার প্রথম লাইন দিয়ে শুরু করবো আজিকার সম্পাদকীয় কলম। আশ্বিনের মাঝামাঝি না হলেও শরতের মাঝামাঝিতে অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোর দিনেই ভোরের বেলা আকাশ-বাতাস মুখরিত করে মহালয়ার সেই অমোঘ সুর,"আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে….' প্রতিধ্বনিত হয়েছে। সাথে সাথে শারদীয় উৎসবের বাজনা বেজে উঠেছিল কিন্তু ওই ছিল পর্যন্তই। তারপর মাসব্যাপী ব্যবধানে ক্রমশ ম্রিয়মান হয়ে যেতে থাকলো সেই বাজনার সুর। কারণ আশ্বিন মলমাস,সঙ্গে অতিমারির সংক্রমণ সহ মৃত্যু ভয়ের নাগপাশে জর্জরিত বাংলা ও বাঙালি। যদিও বা কেনাকাটার আনন্দে মশগুল হয়েছিল আমজনতা,তাও হাতেগোনা কয়েকটি দিনের জন্য। তাতেও বিধি বাম।কোভিড সংক্রমণ কিঞ্চিত মাত্রায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলো। আর তাতেই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মন্ডলীর চোখ কপালে উঠে গেল।সঙ্গে ভবিষ্যৎবাণী, দেবীপক্ষের পরেই শুরু হবে করোনা পক্ষ, জাতীয় সতর্কবার্তা। বাঙালি পিছু হটলো, কিন্তু কয়েকটা দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন রাজ্যের প্রত্যেকটি ক্লাবকে পুজোর জন্য ৫০ হাজার টাকা করে উপঢৌকন দেয়া হবে।এই শুনে পুজো উদ্যোক্তারা কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়লেন। শুরু হয়ে গেল দেবী আরাধনার তোড়জোড়। কতকটা, আর কে পায় গোছের বিষয়। এদিকে শুরু হলো, আদালত-রাজ্য সরকারের আইনি যুদ্ধ। আদালত নিদান জারি করেছিল, রাজ্য সরকারের ঘোষণা করা ৫০০০০ টাকা কোন কোন খাতে খরচ করবে সহ প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে নো এন্ট্রি সাইন বোড ঝোলাতে। এই ঘোষণা বঙ্গবাসীর সমস্ত আশায় জল ঢেলে দিল। প্রথমে বঙ্গবাসী ভাবল হয়ত করোনা ভাইরাস এর থেকেও তাদের প্রধান শত্রু আদালত।এদিকে আবার বিষের বাঁশি বাজাতে বাজাতে নিম্নচাপ এসে হাজির। যদি একটু তলিয়ে দেখা যায় ওই নিম্নচাপই কিন্তু বঙ্গবাসী কে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল। যাক সে কথা,নম: নম: করে এবারের মতো পুজোটা হল কিন্তু মানুষ এই পুজোতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকলো।মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাক ঢোল কাঁসর বাজলো কিন্তু ধুনুচি নাচ হলো না, হলোনা সিঁদুর খেলা, দেখা গেলোনা কাকেও কোলাকুলি করতে। আর যেখানে যেখানে যদিওবা হলো বাঙালির আনন্দের আবেগের বহিঃপ্রকাশ।সেখানেই রয়ে গেল করোনাআতঙ্কের ভ্রুকুটি। যার ফলস্বরুপ আজ পশ্চিমবঙ্গ আক্রান্তের নিরিখে দেশে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে গেল। যা পুজো আনন্দের বড় পুরস্কার।উৎসব মাসের শুরু থেকে শেষ সর্বক্ষণই বেজেছিল বিষাদের সুর।বিষাদের বিসর্জন মনে রাখবে বাংলা ও বাঙালি।