তমা কর্মকার
আমার নাম অক্ষর,আমার বয়স নয়মাস, আমি হাটতে পারিনা, নিজে হাতে খেতেও শিখিনি কিছু,আমি এখনো কথা বলতে শিখিনি,জানিনা কোনটা ভালো কোনটা খারাপ|
আমি বড়োদের মতো মেকি হাসতেও জানিনা,আমার দাঁত ওঠেনি এখনো আমি ফোকলা গালে হাসি প্রাণ খোলা হাসি, আর যখন আমি কাঁদি তখন সবাই আমায় থামাতে ব্যস্ত হয়ে পরে, তবে এমনিতে আমি ভীষণ শান্ত একটুও দুস্টুমি করিনা শুধু ঠাম্মির মেমেন্টো মেডেল নিয়ে গলায় উত্তরীয় পরে শান্ত হয়ে বসে থাকি |আমাকে পাশে বসিয়ে ঠাম্মি যেন একমনে কিসব লিখে চলে আমি কিছু বুঝিনা| এমনি করেই আমার দুপুর কাটে মাঝে মাঝে মায়ের কাছে ঘুমাতে যাই তারপর বিকেল হলে সেজে গুজে ঠাম্মির সাথে ঘুরতে যাই তবে ম্যাক্স পরে ঠাম্মির সাথে সাথে আমিও ম্যাক্স পরি,কি বলে একটা ভাইরাস রোগ এসেছে তার জন্য, প্রথম প্রথম পড়তে না চাইলেও এখন পরি অনেক কথা হলো বাপু এবার আসি তোমার সাথে আমার পরিচয়ের প্রথম দিনের কথায়, |দিনটা ছিলো পঁচিশে বৈশাখ আমি বিকাল বেলা মায়ের কাছ থেকে ঘুম থেকে উঠে ঠাম্মির কাছে আসতে গিয়ে দেখলাম ঠাম্মি সাদা রঙের শাড়ি পড়ে সেজে গুজে সামনে একটা বাটিতে অনেকগুলি বকুল ফুল নিয়ে বসে আছে আমি তো মহা আনন্দে ঝাঁপিয়ে পড়লাম ঠাম্মির কোলে, ভাবলাম ঠাম্মি মনে হয় অন্য দিনের মতো আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে ও হরি দেখি তোমার ছবিতে রজনীগন্ধার মালা চন্দন দিয়ে সাজিয়ে তোমাকে সামনে বসিয়ে
এক নাগাড়ে অনর্গল কথা বলেই চলেছে, আমি কাঁদো কাঁদো রবে বায়না করতেই মা বলল চুপ করে বসে শোনো ঠাম্মি কবিতা আবৃত্তি করছে |কিন্তু কে শোনে কার কথা আমি কি ছাই আবৃত্তি কি বুঝি?আমি তো
আমার স্বভাব সিদ্ধ সরলতায় হামাগুড়ি দিয়ে তোমার ছবিটা ধরতে যেতেই ঠাম্মি আবৃত্তি থামিয়ে বলল দাদা কে ধরেনা ভাই দাদা রাগ করবে|শিশু হলেও বুঝলাম তুমি আমার সম্পর্কে দাদা হও , তবে এটা বুঝলাম না তোমাকে আমি ধরলে তুমি রাগ করবে কেনো? আমি তো দাদান কে ধরি দাদান তো রাগ করেনা বরং আমায় কোলে নেয় আদর করে তবে তুমি রাগ করবে কেনো?মা আমাকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল্ ঠাম্মি বলল থাক ওকে নিও না আমার হয়ে গেছে,এরপর ঠাম্মি তোমাকে প্রণাম করে দেওয়ালের হুকে টাঙিয়ে রাখলেন, আমার কিন্তু তোমাকে ধরা ও ছোঁয়ার কৌতূহল বেড়েই গেলো, কিন্তু কিছুতেই তোমাকে ধরতে ও ছুঁতে পারিনা, মনে মনে ভাবি আচ্ছা সবাই তো আমাকে কোলে নেয় আদর করে, কিন্তু তুমি কেনো কোলে নেওনা আদর কোরোনা শুধু দেওয়ালে টাঙানো অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকো আর মায়াভরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দৃষ্টি রাখো সবার দিকে, আমি ঠাম্মির কোলে উঠলেই তোমার কাছে যাবার বায়না করতে লাগলাম, একদিন ঠাম্মা হুকে টাঙানো তোমার কাছে নিয়ে গেলো, আর তোমাকে হুক থেকে নামিয়ে বলল তুমি রবি দাদার ছবি ধরবে, সেই প্রথম জানলাম তোমার নাম রবি, আমি ঠাম্মির সাহায্যে তোমাকে ছুলাম তোমাকে দেখার প্রথম লগ্নে শিশু মনে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম|তোমাকে ছোঁয়ার পর এক বিদ্যুৎ খেলে গেলো আমার শরীরে |আচ্ছা দাদা তুমি এখন কোথায়? ঠাম্মি বলে সাহেব বড়ো হও তোমাকে দাদার বাড়ি জোড়াসাঁকোতে বেড়াতে নিয়ে যাবো, আবার বলে তুমি বড়ো হও তোমায় দাদার গড়া শান্তিনিকেতনে নিয়ে যাবো ওখানে কোপাই নদী আছে আছে সোনাঝুরির হাট সেখানে নাকি বাউল মেলা বসে?অনেক পশারিরা পসার নিয়ে হাটে আসে, বিকেলের বাতাস ভরে ওঠে বাউল সংগীতে আর নানা রঙের জামা পরে নানা জায়গা থেকে বাউল আসে আর অনেক দেশ বিদেশ থেকে নাকি অনেক লোক আসে ঐ বাউল মেলায় ?জানো দাদা ঠাম্মি বলে তুমি নাকি ঠাকুর তবুও তোমার আলাদা কোনো মন্দির নেই তুমি নাকি সবার মনমন্দিরেই বাস করো? বলোনা দাদা কেমন করে সম্ভব করলে এমন অসম্ভব কাজ, জানো দাদা ঠাম্মি আরো বলে তুমি নাকি আমাদের জন্য অনেক গল্পের বই লিখেছো? লিখেছো গান নাটক কবিতা, আমি তো ছোট্ট তাই বুঝিনা এগুলো কি তবে ঠাম্মি বলে আমিও নাকি বড়ো হয়ে তোমার লেখা সব বই পড়বো তোমার সম্পর্কে অনেক কিছু জানবো,ঠাম্মি তোমাকে নিয়ে তোমার গল্প বলে, বলে তোমার নোবেল সহ কতো বড়ো বড়ো পুরস্কার পাওয়ার কথা, আচ্ছা দাদা রাখী বন্ধনের মতো মহামিলনের উৎসব বলে তোমার হাত ধরেই এসেছিলো? দাদা তোমাকে আরো জানার আরো চেনার কৌতূহল নিয়ে আমি বড়ো হচ্ছি |
তুমি আমাকে আশীর্বাদ করো আমি যেন তোমাকে জানতে পারি তোমাকে চিনতে পারি| তোমাতেই আত্মনিবেদন করতে পারি |ঠাম্মির কাছে শোনা তোমার শান্তিনিকেতনের আম্র কুঞ্জে যেন ঘুরতে পারি, সাল পিয়াল শিমুলের বনে যেন মুক্ত মনে যেন বিশুদ্ধ বাতাসের তালে তালে বসন্তের হোলির আবির গায়ে মেখে যেন রবীন্দ্র সংগীত শুনতে পারি|দাদা আমরা আমাদের এই প্রজন্মেও যে তোমাকে কাছে পেতে চাই তোমার আদর খেতে চাই, অমলের মতো মিনির মতো তোমাতে তোমার ছোঁয়া চাই |অনলাইন নয় অফ লাইনে তোমাকে চাই তোমাকে যে আমাদের ভীষণ প্রয়োজন |দাদা একবার ছবি থেকে বেড়িয়ে এসে কি বলতে পারোনা আয় নবীন আয়রে আমার কাঁচা, আমি সশরীরে না থেকেও গোলোকে থেকেও ভুলোকে ছিলাম তোদের মাঝে আজ আবার এই ধরায় ফিরে এসেছি তোদের কাছে তোদের আবদারে|
এসো দাদা আবার ফিরে ঠাম্মা দাদুর সাথে সাথে তোমার হাত ধরেও তোমার লেখা সেই গান খানি গাইতে চাই সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে ফুল ডোরে বাঁধা ঝুলনায়,অথবা মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি
আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি|হোক না দাদা নতুন করে আবার শাপমোচন|নয়তো অমল দইওয়ালার মতো আমি হবো অমল তুমি না হয় হয়ো দইওয়ালা|তবু একবার ফিরে এসো আমার পরম প্ৰিয় পূজনীয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দা দা |