সুরা যখন অসুর - BBP NEWS

Breaking

বুধবার, ৬ মে, ২০২০

সুরা যখন অসুর


মাসুদূর রহমান

"সুরা যখন অসুর' শিরোনামের সম্পাদকীয় কলম লিখতে বসে প্রথমেই সেই বিখ্যাত গানটির প্রথম কয়েকটি ছত্রের কথাই বারবার ধরে মনের মধ্যে সূচ ফুটিয়ে চলেছে। গানের কথাগুলি কেমন?বললেই আপনি গুনগুন করে গেয়ে উঠবেন। আবার এই প্রসঙ্গে বাজি ধরেও বলতে পারি, যে, আপনি ওই পানীয়টি না পান করেও কিন্তু আপনার মুখে অতি নাটকীয়তা আসবে,জিভটা উল্টে যাবে,কথা তোতলাতে থাকবে।আর তখনই আপনি গেয়ে উঠবেন, 'বিপিন বাবুর কারণ সুধা, মেটায় জ্বালা মেটায় ক্ষুধা, মরা মানুষ বাঁচিয়ে তোলে, এমনি যে তার জাদু…..।' সত্যি তাই সেই জাদুতেই মশগুল হলো সারাদেশ।কোভিড19এর মোকাবিলা করতে হলে একমাত্র উপায় ছিল সমগ্র দেশজুড়ে লকডাউন। শুরুও হলো লকডাউন।তারি মাঝে বিক্ষিপ্তভাবে লকডাউন এর শুরুর দিকে গোটা বাংলা জুড়ে দেখা গেছে কোথাও অ্যাম্বুলেন্সে করে, আবার কখনো বা সাধারণ মানুষকে রোগী সাজিয়ে সেই গাড়িতে করেই ওই পানীয়টি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে গিয়ে দেদার বিক্রি করতে। তাও আবার প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে। তা যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছয়লাপ হয় তখনই প্রশাসন নড়ে চড়ে বসে এবং কড়া হাতে দমন করে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো,প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউন নির্বিঘ্নে সমাপন হলেও কেন তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম দিনেই দেশের মদ‍্যপায়ীদের সেই সুবিধার দরজাকে উন্মুক্ত করা হল?তারা কি সুরা পান করে স্পাইডারম্যান বা সুপারম্যান হয়ে করোনার মতো অতি মহামারী কে মোকাবিলা করার জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন? না, সেসব কিছু না,এর নেপথ্যে অন্তর্নিহিত একটা ব্যাখ্যা আছে‌। কি সেটা? দেশজুড়ে লকডাউন এ অর্থনীতি একদম কোমায় চলে গেছে।তাই সেই দুর্বল অর্থনীতিকে একটু সূরা খাইয়ে চাঙ্গা করা। কিন্তু কোনটা আগে?১৩০ কোটির প্রান? নাকি মুষ্টিমেয় সুরাসক্ত মানুষকে গোপন অক্সিজেনে চাঙ্গা করা? তাহলে সেদিন খুব দূরে নেই, যেদিন এই ঘোরতর সংকটের দিনে দেখা যাবে যাদের পতিতা গৃহে যাওয়া অভ্যাস, তারা আন্দোলন শুরু করবে। তখন কি সরকার পারবে তাদের অনুমতি দিতে? কেননা সেখান থেকেও তো সরকারের কোষাগার সমৃদ্ধ হয়।

গত সোমবার থেকে খুলে গেল মদের দোকান।রাজ্যজুড়ে নিয়মের তোয়াক্কা না করে মদের দোকানের সামনে লম্বা লাইন।কোথাও সামাল দিতে নামলো বিরাট পুলিশ বাহিনী।আবার কোথাও সেই লাইনকেই প্রশাসন করলো ছত্রভঙ্গ।ধনী থেকে দরিদ্র যারা এই দুর্দিনে সংসার কি করে চলবে তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছিলেন,সরকার পর্যাপ্ত সাহায্য না করার জন্য সেই সরকারকেই গালমন্দ দিচ্ছিলেন, তারাই আবার, মদের দোকান খুলবে সরকার,শুনেই সব দুশ্চিন্তা গায়েব। সত্য সেলুকাস, আজ তোমার কথাই বড্ড মনে পড়ছে।

 কিন্তু যার করালগ্রাসে সমগ্র পৃথিবী থরহরি কম্প। যার শেষ কোথায় তা ভাবাই এখন পাগলের প্রলাপ। সেই অতি মহামারীর মত করোনা ব্যাধিকে সমীহ না করেই সুরা খেয়ে অসুর হয়ে যে তান্ডব লীলা চালাচ্ছে সুরাপ্রেমীরা, তাতে যেমন ১৩০ কোটির প্রাণ সংশয়ে এবং তা যেমন স্বীকার্য। আর যদি তা না থামিয়ে দিনের পর দিন চলতে থাকে এই পদ্ধতি তাহলে মাত্র কয়েকদিনেই যে ভারতভূমি শ্মশান ভূমিতে পরিণত হবে তাও কিন্তু তেমনি স্বীকার্য।

Pages