মাসুদূর রহমান
কি করে থাকবে? আজ এটা শুধু আমার প্রশ্ন নয়, সমগ্র মানবজাতির প্রশ্ন। বিশ্বের প্রত্যেকটি মানুষ আড্ডা দেওয়াতে সিদ্ধহস্ত এবং তারিয়ে তারিয়ে ভালোওবাসেন। আড্ডার আসরে বসেন না, এমন কেউ আছে বলে আমার অন্তত মনে হয় না। এমন কেউ যদি থেকেও থাকেন অনুগ্রহ করে হাতটা তুলে একটু জানান দেবেন। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁকে পুরস্কৃত করবো। থাক সে কথা।আড্ডা দেওয়ারও একটা প্রকারভেদ আছে।তা কেমন? পাড়ার রকে বসে আড্ডা, ঠাকুরদালানে, পুকুর ঘাটে, নদীর ধারে, দিঘির পাড়ে, চায়ের দোকানে, মাচায়, পার্কে, খেলার মাঠে, ক্লাবে এমন কতোনা স্থান আছে আড্ডা দেওয়ার জন্য। আর এখন আধুনিক যুগের আধুনিক ভাবনায় আড্ডার স্থান হল ছোট বড় নানা ধরনের কফি হাউস। আড্ডা দেওয়ার স্থান-কাল-পাত্রভেদে হয়তো পরিবর্তন এসেছে কিন্তু 'আড্ডা' সে যেমন ছিল আজও তেমনি আছে।
এবারে প্রথমেই করা প্রশ্নের উত্তরে আসা যাক। সেই প্রশ্নের উত্তরে একটিমাত্র উত্তর হয়। তাহলো কোভিড-19। যার অতর্কিত হানায় পাড়ার ক্লাব থেকে শুরু করে কলেজ স্ট্রিটের ঐতিহ্যবাহী কফি হাউস,যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম, ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা ভাবনার মানুষের আড্ডার পীঠস্থান গুলো কেমন যেন ভাঙ্গা হাটের চেহারা নিয়েছে। আড্ডা প্রিয় বাঙালির চায়ের কাপে ঝড় তুলে হইহই অনাবিল আনন্দের দিন আজ শেষ করে দিয়েছে করোনার বাড়বাড়ন্ত। আড্ডা কোন দিন কোন সময়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে গন্ডিতে আবদ্ধ ছিল?একসাথে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে, একসাথে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে, একই বিড়ি বা সিগারটে একের পর এক সুখটান দিতে দিতে নিবিড় বন্ধুত্ব ভুলিয়ে দিয়েছে সময়কে।সেখানে ছিল না কোন দূরত্ব বিধি, সেখানে ছিল না কোন অন্য কারোর ছোঁয়ার ভয়।কিন্তু আজ একা করোনা সে সব কিছুকে উল্টে পাল্টে দিয়েছে।
সেই আড্ডা কি আর কোনদিনই ফিরবে না? সেতো প্রত্যেকটি মানুষের রক্তের সাথে মিশে আছে। এ এমনি এক নেশা যেখানে ডুব দিয়ে শুধুমাত্র আনন্দকেই খুঁজে পাওয়া যায়।তবু থেকে যাচ্ছে অনেক প্রশ্ন,অনেক চিন্তাভাবনা। যদিওবা আড্ডা ফেরে তাহলে কি সেই আগের মতই আবার ফিরে আসবে নাকি অন্য কোন রুপে। তাইতো সেই মহান গায়কের এই গানটাই বারবার ধরে গলা ছেড়ে বেরিয়ে আসছে…….. কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই ...কোথায় হারিয়ে গেছে সোনালী বিকেল গুলো সেই আজ আর নেই…….।