“বীণা বাজাও হে মম অন্তরে” - BBP NEWS

Breaking

মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০

“বীণা বাজাও হে মম অন্তরে”

শুভ্রজিৎ চ্যাটার্জী


সংস্কৃত “বাতুল” শব্দটি প্রাকৃত ও অপভ্রংশের মধ্যে দিয়ে পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত হয়ে বাংলা ভাষার ব্যাকরণের তদ্ভব শব্দের নিয়মানুসারে “বাউল” শব্দের উৎপত্তি। ‘বাউল’ শব্দের উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ আছে। আরও একটি মত হল ‘বায়ু’ শব্দের সাথে ‘আছে’ এই অর্থ- দ্যোতক ‘ল’ প্র্যতয় যোগ করে এই শব্দের উৎপত্তি। বায়ু শব্দের অর্থ যোগশাস্ত্রের স্নায়বিক শক্তির সঞ্চারের জন্য সাধনা করেন, তাঁরাই “বাউল”।
 
    বাউল সম্প্রদায়ের সৃষ্টি ১৪শ শতাব্দীর শেষ ভাগে বা ১৫শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে। বাউল সৃষ্টি হয়েছে ‘সিদ্ধাত্ত’ মুসলমান ফকির থেকে। ষোড়শ, সপ্তদশ, অষ্টাদশ শতাব্দীতে যথেষ্ট বাউল ছিল।
 
    বাউল-রা হলেন বাংলার একদল অতীন্দ্রিয় চারণ কবি। এরা মূলত আদি শক্তিকে এদের গানের মাধ্যমে আরাধনা করে থাকেন। এদের কোন নির্দিষ্ট ধর্ম নেই। এরা যেমন হিন্দু বৈষ্ণব আবার তেমনি সুফি মুসলিম। এদের বাহ্যিক দর্শনটিতে চেনার একমাত্র লক্ষ্যণ হল এদের পোশাক এবং এদের সাধনার ধরন দেখে! এদের জীবনের সংজ্ঞা হল- স্বচ্ছ সাধারণ থাকা ও ভালবাসা। মিল খুঁজে পাওয়া যায় বৌদ্ধ লামা’র সাথে। এঁনাদের সাধনার মূল বক্তব্য হল, ভালবাসার মাধ্যমে নিজ বন্ধন থেকে অসীমে বিরাজ করা। বাউলরা সন্ন্যাসী নয়; এরা সংসার করে, ঘর বাঁধে। সেই অসীম কাল-সাগরে যিনি বিরাজ করেন, সেই মহামানব, যাকে খুঁজে পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে এ হৃদয়-বীণা। সে যে আবার-  
                                  তারে ধরি ধরি মনে করি
                                 ধরতে গেলে ধরা দেয়না…
    বাউল সাধনার মূল উপাস্য বস্তু হল নিজ ‘দেহ’। বাউল-দের সহজ কথা আর সহজ সুরের মাধ্যমে ঈশ্বর সাধনা, যা সবাই অনুভব করেতে পারেন না। গুরুদেব এর কোমল দৃষ্টি দ্বারা সহজেই আকৃষ্ট হন এবং সেই সাধনা সমাদরে গৃহন করেন। রবি বাবু বাউল ছিলেন না! একথা সত্য, কিন্তু তাঁর সমগ্র সত্ত্বা জুড়ে চিরকাল একতারা বাজিয়েছেন এক “বিশ্ব-বাউল”। কবির সমস্ত জীবন জুড়ে একতারার তারে সুরে-ছন্দে বারে বারে ধ্বনিত হয়েছে বাউল সাধনার মতো মুক্তি পাগল, আনন্দ-বেদনা ঘন নিরাসক্ত এক ‘সহজিয়া’ সাধনার সুর। শিক্ষিত সমাজের কাছে প্রায় অচ্ছুৎ বাউল গানকে জাতে তুলে নেওয়া রবীন্দ্র প্রতিভার একটি বিশেষ দিক। যে সম্প্রদায় দেহে স্নায়বিক সঞ্চারের জন্য সাধন করেন, তাঁরাই বাউল। রবি বাউলের দার্শনিকতায় এই সাধনা, এক মহান সাধনায় রূপান্তরিত হল এবং তিনি ও এই সাধনায় মগ্ন হলেন। বাউল-সম্প্রদায় সহজিয়া সাধন পথের পথিক। রবি ঠাকুর ও কৃচ্ছ-সাধনের কঠোর পথকে কখনই গ্রহণ করেননি। তাইতো বাউল গগন হরকরা গেয়েছেন-
                       আমি কোথায় পাব তারে,
                      আমার মনের মানুষ যেরে
মূল বক্তব্য- বিন্দুর মধ্যে সিন্ধু দর্শন…
 
    বাউল দেহাত্মবাদী। এই দেহে ব্রহ্মাণ্ডের ক্ষুদ্র অনুকরণে স্বর্গ ও নরক আছে। বাউলের সাধনা সহজ সাধনা হলেও গুরু ছাড়া এপথে অগ্রসর হওয়া দুঃসাধ্য। এজন্য তারা সর্বদা গুরুর ভজনা করবার, গুরুর উপদেশ অনুসরন করবার জন্য আদিষ্ট এবং প্রস্তুত।
 
    ভৌগলিক পরিবেশের পার্থক্য যেমন ঘটে তেমনি বাউল সুরের ও পার্থক্য দেখা যায়। পূর্ববঙ্গ প্রধান বাউল গানে ভাটিয়ালি কিন্তু মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গে মেলে কীর্তন, ঢপ কীর্তন, উত্তর বঙ্গে ভাওয়াইয়া আর মিশ্র কীর্তন, আর পশ্চিমে ঝুমুর এর সুরের প্রাধান্য। অর্থাৎ এর থেকেই বোঝা যায় যে, বাউল সুর বলতে কোন নির্দিষ্ট সুর নেই আঞ্চলিক সুরই অঞ্চল্ভিত্তিক বাউলদের সুর। ভারতের বাউল গান নৃত্যময়। নাচের সাথে গান এখানে অচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। কিন্তু পূর্ববঙ্গে অর্থাৎ বাংলাদেশে বাউল গানে নৃত্য নেই, সেখানে সুর আছে- তালের খুব একটা গুরুত্ব নেই।
 
    কবিগুরু’ কর্মসাধনার একটা বড় অংশ কেটেছিল শান্তিনিকেতনে- আর বীরভূম কেবল বাউলদের পীঠস্থান নয়, উদ্ভবতীর্থ ও বটে। কিন্তু গুরুদেব বাউলদের সংস্পর্শে আসেন ১৮৯০ সাল নাগাদ পূর্ববঙ্গে থাকার সময় থেকে। শান্তিনিকেতনে কবি, শ্রী নবনী দাস বাউলের সাথে মিত্রতা করেন এবং বাউল সাধনা সম্পর্কে বিশেষত্বের কথা জিজ্ঞাসা করায় উনি বলেন- “বলা কঠিন, ঠিক বলা যায় না”। কবি বলেন- “তোমাদের এই ধর্মের কথা পৃথিবীর লোককে শোনাও না কেন?”। তখন বাউল বাউল সাহেব বলেন- “যার পিপাসা হবে, সে গঙ্গার কাছে আপণি আসবে”। এ শুনে কবি বলে ওঠেন- “তাই কি পাচ্ছ? কেউ কি আসচে?”। তিনি তখন এক প্রশান্ত হাসি হেসে উত্তর দিয়েছিলেন- “সবাই আসবে! সবাই কে আসতেই হবে!”। এই শুনে কবি বাউল সাধনার প্রেমানলে দগ্ধ হয়ে পূর্ণতা খুঁজে পান। ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড এর হিবার্ট লেকচার এ বলেন- “That is why, Brother, I became a madcap Baul. No matter I obey, nor injection, custom. Now no men-made distinctions have any hold on me. And I revel only in the gladness of my own willing live. In love there’s no separation, but commingling always. So I rejoice in song and dance with each and all. I called Nabani as KHYEPPA, he also the Mirror of the Sky! Nabani is a Mad-Maker Machine. He had completely changed me  with his song, dance and smile. I called myself as BAUL RABI.”
 
    গগন বাউল ছিলেন একজন ডাকহরকরা তথা লালন ভক্ত। রবি ঠাকুরের সাথে লালন ফকিরের দেখা হয়েছিল কিনা, তা সঠিক জানা যায় না। রবীন্দ্রনাথ নিজ প্রচেষ্টায় সমস্ত প্রাচীন বাউলদের গান সংগ্রহ করেন। সেই সমস্ত অমূল্য সম্পদ আজ ও বিশ্বভারতী’র সংগ্রহশালায় সজত্নে রক্ষিত আছে। গগন বাবুর গাওয়া-
                    দেখেছি রূপ সাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা-
এই গানের সুরে আর বাণী তে অনুপ্রানিত হয়ে কবি বলে উঠলেন-
                  ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে
এর আলচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন- “এমন বাউলের গান শুনেছি, ভাষার সরলতায় ভাবের গভীরতায়, সুরের দরদে যার তুলনা মেলে না। তাতে যেমন গানের তত্ত্ব, তেমনি কাব্য রচনা, তেমনি ভক্তির রস মিশেছে। লোক সাহিত্যে এমন অপূর্বতা আর কোথাও পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করিনে”। মহম্মদ মনসুরউদ্দীন এর বিখ্যাত লোকসঙ্গীত সংগ্রহ “হারমণি”-‘র ভুমিকায় (বৈশাখ ১৩৩৭) কবি লিখেছেন- “বাউলের সুর ও বাণী কোন এক সময়ে আমার মনের মধ্যে সহজ হয়ে মিশে গেছে”। ১৯০৫ সালে “বাউল” নামে রবীন্দ্রনাথের একটি গীত-সংকলন প্রকাশিত হয়। কোন দিনই কবি নিজেকে আবদ্ধে বদ্ধ রাখতে পারেননি, সেই ছোটবেলা থেকে। “শিশু ভোলানাথ” কাব্য গ্রন্থের ‘বাউল’ কবিতায়, বাউলদের প্রতি আকর্ষণ প্রকাশ পায়-
                 রুদ্ধদ্বার গৃহে অন্তহীন শিশুর কন্ঠে-
                  মন যে আমার পালায়
       তোমার একতারা পাঠশালায়- আমায় ভুলিয়ে দিতে পারো
                নেবে আমায় সাথে?
       এ সব পণ্ডিতেরই হাতে        আমায় কেন সবাই মার?
মনের মধ্যে সেই পলায়ন প্রবৃত্তি শৈশব থেকেই কবির মনে বাসা বেঁধেছিল। ‘খ্যাপা বাউল’ তাঁকে চিরকালই খেপিয়ে বেড়িয়েছে। তার প্রকাশ ঘটালেন তিনি “প্রায়শিত্ত” নাটকের ধনঞ্জয় বৈরাগীর কণ্ঠে-
                 আমারে পাড়ায় পাড়ায় খেপিয়ে বেড়ায় কোন খ্যাপা সে!
                  ওরে আকাশ জুড়ে মোহনসুরে কী যে বাজে কোন বাতাসে।।
তা ছাড়াও “রাজা”, “ফাল্গুনী’”, “অরূপরতন” প্রভৃতি নাটকে বাউল নামে একটি করে চরিত্রের প্রকাশ ঘটেছে, আর তাদের গান নাটকীয় তত্ত্বের দরজায় আঘাত করে গেছে।
 
    বাউলদের একতারা বিশ্বকবির গানে বারবার ঝঙ্কার তুলেছে। এই একতারাটি তিনি প্রতীকরূপে ব্যবহার করেছেন তাঁর পূজা, প্রকৃতির গানে-
            *একমনে তোর একতারাতে    একটি যে তার সেইটি বাজা
            *আমার দোসর যে জন তারে কে জানে?
            *আমার বেলা যে যায় সাঁঝবেলাতে
            *বাদল  বাউল বাজায় রে একতারা
 
    রবীন্দ্রনাথ বিশ্ব-পথিক। গীতবিতানের পূজা পর্যায়ের উপপর্যায় ‘পথ’। এই বিষয়ে কবির গান গুলি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ-
পান্থ তুমি পান্থজনের সখা হে পথে চলাই সেই তো তোমার পাওয়া।।
কবি আনন্দযজ্ঞের পুরোহিত। গানে গানে তাঁর মুক্তি, আনন্দ উপপর্যায় -
              জগতে আনন্দ যজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ ধন্য হল, ধন্য হল মানব জীবন।
উপপর্যায় বাউল, গীতবিতানে ক্রমিক সংখ্যা- ৫৮৬-৫৫৮। এই গানগুলির মধ্যে রবীন্দ্রনাথ সুন্দরভাবে ‘মনের মানুষ’, ‘প্রানের মানুষ’ প্রভৃতি কথা গুলি ব্যবহার করেছেন-
              *আমি তারেই খুঁজে বেড়াই    যে রয় মনে আমার মনে,
              *আমার প্রানের মানুষ আছে প্রানে  তাই হেরি তায় সকল খানে
 
    উদাস বাউল অহংকার নিষ্ঠ মানুষের কাছে বাতুল বা পাগল নামে পরিচিত। দুখ-বেদনা-লাঞ্ছনা তারা নিরাসক্ত সন্ন্যাসীর মতো উপেক্ষা করে। নিন্দা বা স্তুতিতে বাউল বিচলিত নয়-
          বুলুক সে বুলুক/ যার মনে যা লয় গো
          আপনা পথের পথিক আমি/ কার বা করি ভয় গো।
 
    রবীন্দ্রনাথ ও বহু নিন্দা, সমালোচনা, দুঃখ, শোক সহ্য করেছেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ও তাঁর সঠিক ভূমিকাটি কি ছিল, এ নিয়ে ভারতবাসীর মনে সন্দেহ জেগেছিল। অনেকেই তাঁকে ব্রিটিশদের তোষামোদকারী হিসাবে ও আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তা উসাসী বাউলের মতন উপেক্ষা করেছেন। তাই তো তাঁর স্বদেশ পর্যায়ের একটি গান-
              যে তোরে পাগল বলে, তারে বলিস নে কিছু।
              আজকে তোরে কেমন ভেবে অঙ্গে যে তোর ধুলো দেবে
             কাল সে প্রাতে মালা হাতে আসবে রে তোর পিছু পিছু।।
             আজকে আপন মানের ভরে থাক সে গদির ‘পরে-
              কালকে প্রেমে আসবে নেমে, করবে সে তার মাথা নিচু।।
দেখা গেল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের যুগে জাতিকে তিনি যে স্বদেশ পর্যায়ের গান গুলি উপহার দিলেন, তার মধ্যে বাউলের সহজ কথা আর সহজ সুর, এক নব জাগরনের হাতিয়ার। কয়েকটি মূল বাউল গান আর তার থেকে সৃষ্টি ভাঙা গান নিম্ন-রূপ
        রবীন্দ্রসঙ্গীত                                                                            মূল গান
আমার সোনার বাংলা                                                             আমি কোথায় পাব তারে
ও আমার দেশের মাটি                                                           সোনার গৌড় কেন কেঁদে এল
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে                                       হরিনাম দিয়ে জগৎ মাতালে
 
    পরবর্তী কালে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং আর এক ধরনের বাউল-সুর সৃষ্টি করলেন। যার মধ্যে বাউলের সুরের সঙ্গে কীর্তন আর কিছু রাগ-রাগিনী’র সুর। এছাড়া পরিবর্তিত হলো বাউল গানের আকৃতির গঠন। এগুলিকে বলা যেতে পারে- “রবি বাউলের গান”-
            *যেথায় তোমার লুট হতেছে ভুবনে/ সেইখানে মোর চিত্ত যাবে কেমনে!
            *এই তো ভালো লেগেছিল       আলোর নাচন পাতায় পাতায়,
      শালের বনে খ্যাপা হাওয়া    এই তো আমার মনকে মাতায়।
 
    বিধিনিয়ম শাস্ত্রবন্ধন আচার অনুশাসন বাউলদের কাছে মিথ্যা ও অবান্তর। কৃচ্ছসাধনের বৈরাগ্যে তাদের অনীহা, কবির মতোই তাদের সহজিয়া দর্শন যেন-
            গানের সুরে আমার মুক্তি ঊর্ধ্বে ভাসে ॥
কবিগুরুর বাউল মূর্তি হলো ধর্ম আর রাজনীতির উপর, যা আমাদের বোধগম্য নয়। প্রথম যুগের বাউল সুর ছিল কেবলমাত্র সাহিত্য সৃষ্টির রূপ, পরবর্তী কালে তা দিয়ে ভ্রমণ করতে লাগলেন অন্তরাত্মার বিশ্বে! তাঁর রচনার মধ্যে তিনি সেই চিত্র অঙ্কণ করেছেন যেখানে পল্লিসমাজের এক চরিত্র এক মহৎ পথ প্রদর্শন করতে পারে, যা ঘৃণা, হানাহানি, রোধ করে প্রকৃতির সাথে এক নিবিড় যোগাযোগ সাধন করতে পারে।
 
    কবি তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কর্মস্থান হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন- বাউল-তীর্থ, রাঙা মাটির দেশ, বীরভূমের বোলপুরে; শান্তিনিকেতন কে। আড়ম্বরহীন সহজ সরল জীবন যাত্রা ছিল যে তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। শান্তিনিকেতনে সব সময় তিনি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে গান, নাচ, হাসি-আনন্দে সর্বদা মেতে থাকতেন। “ফাল্গুনী” নাটকে তিনি বাউল বেশে নৃত্য পরিবেশন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। তাঁর আলখাল্লা পরিহিত, দীর্ঘ মূর্তিটি আমার কাছে এক বাউলেরই প্রতিচ্ছবি! জীবনের শেষ সৃষ্টিতে “তোমার সৃষ্টি পথ” কবিতায় এক ছলনাময়ী’র উদ্দেশ্যে কবি যে কথা বলেছেন, তাও এক “বাউল’-এর কথা। আর সেই ছলনাময়ীই রবীন্দ্রনাথের ‘অধরা’ ‘জীবন দেবতা”। তাঁর সমগ্র জীবন ধরে তিনি যাঁর পথ-সন্ধান করেছেন। তাই ‘প্রকৃত বাউল’ না বললে ও এক “বিচিত্র বাউল” বলা যেতেই পারে।
 
    বিশ্বে আজ জাতি, ধর্মের বিরোধে বিভক্ত ও জর্জরিত। এ যুগের মানুষের এটিই হলো সমস্যা। মানব সমাজ এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে, যদি বাউলদের মতো উদার দৃষ্টিতে সব জীবের মধ্যে ভালবাসার সঞ্চার করতে পারে।
 
    আজ এই বলে শেষ করা যাক যে- এযুগের মানুষের কাছে বাউল ও রবি-বাউল এর যুক্ত সাধনার অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এই সাধনার দ্বারাই নানা ভাবে বিচ্ছিন্ন মানব সমাজ আজ ঐক্যবদ্ধ হোক এবং সমগ্র বিশ্বের সামনে এক মহৎ দৃষ্টান্ত খাড়া করে দেশের ও বিশ্বের গৌরব বৃদ্ধি করুক।
 
            হৃদয়নন্দনবনে নিভৃত এ নিকেতনে
            এসো আনন্দময়, এসো চির সুন্দর।।
 
 
প্রাপ্তিস্বীকার
গীতবিতান- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সঞ্চয়িতা- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জীবনস্মৃতি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
পিতৃস্মৃতি- রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রসঙ্গীত- শান্তিদেব ঘোষ
রবীন্দ্রসঙ্গীত বিচিত্রা- শান্তিদেব ঘোষ
বাংলা কাব্যসঙ্গীত ও রবীন্দ্রসঙ্গীত- ড. অরণ কুমার বসু
ভারতীয় সংগীতের কথা- প্রভাত কুমার গোস্বামী
ব্যাকরণ কৌমুদী- ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর
সৃষ্টি ছাড়ার প্রবন্ধ বিচিত্রা- শ্রী দেবাশিস্‌ মুখোপাধ্যায়
অক্সফোর্ড প্রেস- ফেসবুক পেজ

Pages