মাসুদূর রহমান
সেই কবে কার কথা, উনিশ শতকের গোড়ার দিক। সালটা ১৮২০। ব্রিটিশ শাসনের গনগনে আঁচে তখন ভারতবর্ষ ঝলসে যাচ্ছে। নয় নয় করে ২০০ টা বছর সমগ্র মানবসভ্যতা তার কাঁধে চড়ে বেড়াচ্ছে আজও। অথচ মাত্র তিন বছর আগে ৩রা জুন তারিখে বিশ্ব স্বীকৃতি পেয়েছ। সে কথা আজ থাক। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আজ ও সে মানুষের সেবায় নিয়োজিত প্রাণ।যখন আধুনিকতা তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল, আবার এই গভীর সংকট কালে তাকে কাছে টেনে নিয়েছে। এতক্ষণ পর্যন্ত যার নামে এই গৌরচন্দ্রিকা সে হল আমাদের সকলের এই মুহূর্তের সহায়-সম্বল "সাইকেল"।
সমগ্র দেশ সহ সমগ্র বিশ্ব আজ গভীর সংকটের মুখে দণ্ডায়মান। করোনার মত মারন ভাইরাস সারা বিশ্বকে প্রতিদিন চোখ রাঙিয়ে চলেছে।দীর্ঘদিন লকডাউন এর ফলে দেশের অর্থনীতি একেবারে ভেঙে পড়েছে। সাধারণ মানুষ দিশেহারা কিন্তু তবুও করোনার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে পেটের তাগিদে কর্মমুখী হতে হবে কিন্তু কর্মমুখী হলেই যে সমস্ত সমস্যার নিরাময় হবে তাও জোরের সাথে বলা যায় না। কারণ, সেখানেও আছে সামাজিক দুরত্ত্বের ভয়। রাজ্যের সরকার জনসাধারণের জন্য সরকারি বাসের ব্যবস্থা করেছে কিন্তু জনসংখ্যার কাছে সে বাসের সংখ্যা নস্য মাত্র। তাই সোশ্যাল ডিসটেন্স উঠেছে শিকেয়। আর এই চরম পরিস্থিতিতে মোকাবিলা করার জন্য মানুষ শহর থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে শহরে পৌঁছচ্ছে সাইকেলে করে। সেই সাইকেল, যা আধুনিকতার সাথে দৌড়াতে না পেরে স্থান করে নিয়েছিল নিজ নিজ গুদামঘরে।কিন্তু অদৃষ্টের কি নিষ্ঠুর পরিহাস, তাকেই আজ ছেড়ে মুছে পরিষ্কার করে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলছি আমি, আমরা। সেইই আজ ভূমিকা নিয়েছে পেটকে বাঁচতে, সংসার কে বাঁচতে।ভাবতে আশ্চর্য লাগে, যে সাইকেলে চেপে কোন খরচা না করেই নিজেদের অফিসে পৌঁছানো যায়। শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধি পায়। পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখে।সেই সুযোগ্য বন্ধুটিকে মানুষ বড় অবহেলা করেছে কিন্তু করোনাভাইরাস মানুষকে তারই কাছে আজ মাথা নত করতে বাধ্য করেছে।