১৫ নারী নিয়ে তৈরি হয়েছিল গ্রাম, এই গ্রামে পুরুষ নিষিদ্ধ - BBP NEWS

Breaking

বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

১৫ নারী নিয়ে তৈরি হয়েছিল গ্রাম, এই গ্রামে পুরুষ নিষিদ্ধ

 


বিবিপি নিউজ: তাদের প্রধান জীবিকা গয়না বিক্রি। আর সেই গয়নার উপর নির্ভর করেই চলে তাদের সংসার। বিগত পনের বছর ধরে এভাবেই জীবন যাপন করে চলেছে উমোজার নারীরা। এই গ্রামে পুরুষদের  ঢোকা নিষেধ। রোজালিনা লিয়ারপুরা তখন ছোট্ট শিশু।  বয়স তিন বছর। বাবাকে সে কখনোই দেখেনি। শুনেছে, বাবা নাকি তার জন্মের আগেই মারা গেছেন। মা তাকে নিয়ে খুব ভয়ে থাকতেন। তারা কেনিয়ার সাম্বরু জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। তাদের সমাজ ভয়ংকরভাবে পুরুষতান্ত্রিক। এখনো আছে বহু বিয়ের চল। এমনকি প্রচলিত আছে মেয়েদের ‘খতনা’র কুখ্যাত প্রথা। ছোট থাকতেই কেটে ফেলা হয় মেয়েদের যৌনাঙ্গের খানিকটা অংশ। বাবা নেই। মায়ের পক্ষে সম্ভব ছিল না একা সে প্রথার হাত থেকে মেয়েকে বাঁচানো। তাই রোজালিনাকে নিয়ে তিনি পালিয়ে আসেন উমোজা গ্রামে।


‘উমোজা’ সোয়াহিলি ভাষার শব্দ। অর্থ ‘একতা’। ১৫ নারীর যূথবদ্ধতায় যাত্রা শুরু হয়েছিল এই গ্রামের। ১৯৯০ সালে। কেনিয়ার সাম্বরু অঙ্গরাজ্যের আর্চার্স পোস্ট শহরের কাছে। রাজধানী নাইরোবি থেকে প্রায় আড়াই'শো মাইল দূরে। তাঁরা সবাই হয়েছিলেন ধর্ষণের শিকার। ব্রিটিশ সেনাদের দ্বারা। সে ঘটনার পর সেখানকার পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তাঁদের ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। অথচ তাঁদের কোনো দোষ ছিল না। তাই তাঁরাই উল্টো সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখান। গড়ে তোলেন পুরুষহীন গ্রাম।


গ্রামটি প্রতিষ্ঠার মূল কারিগর রেবেকা লোলোসোলি। এ জন্য তাঁকে চড়া মূল্যও দিতে হয়েছিল। ‘আমি যখন এই ভাবনার কথা বাকি মেয়েদের বলতে শুরু করি, লোকজন ভীষণ খেপে গিয়েছিল। একদল লোক আমার ওপর চড়াও হয়। এমন মেরেছিল যে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। মেরে আমাকে তারা ‘শিক্ষা’ দিতে চেয়েছিল’, বলেন রেবেকা। কিন্তু দমে যাননি তিনি। তাঁর নেতৃত্বে নির্যাতিত ১৫ নারী যাত্রা শুরু করেন উমোজার। ধীরে ধীরে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে পুরুষহীন গ্রামটির নাম। হ্যাঁ, উমোজায় কোনো পুরুষের প্রবেশাধিকার নেই। ছোট্ট গ্রামটার চারদিক কাঁটার বেড়া দিয়ে ঘেরা। সেটা ডিঙিয়ে কোনো পুরুষ প্রবেশ করলেই তাকে চালান করা হয় স্থানীয় থানায়। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও সেখানকার ভীষণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মেয়েদের কাছে সেটার মাহাত্ম্য একেবারেই অন্য রকম। পুরুষ নেই মানে নারীর প্রতি সহিংসতা নেই, নির্যাতন নেই, ধর্ষণ নেই। আর তাই এক এক করে সেসবের শিকার নারীরা এসে যোগ দিতে থাকে তাদের সঙ্গে। বাবা হয়তো টাকার বিনিময়ে বাচ্চা মেয়েকে তুলে দিচ্ছিল কোনো বুড়োর হাতে। কিংবা স্বামীর নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা কোনো মেয়ে বা ধর্ষণের শিকার। অথবা মেয়েকে ‘খতনা’র হাত থেকে বাঁচাতে চাওয়া মা। বর্তমানে তাঁদের সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। আর তাঁদের সন্তান আছে শ দুয়েক।


Pages