প্রদীপ ব্যানার্জি, অশোকনগর: অশোকনগর বিধানসভা অঞ্চলের মধ্যে কল্যাণগড় একটি উদ্বাস্তু অধ্যুষিত অঞ্চল। স্বাধীনতার পর ওপার বাংলার ভিটে ছাড়া মানুষজন গড়ে তোলেন এই উপনগরী। তৎকালীন সময়ের বিচক্ষণ নাগরিকেরা অনুধাবন করেছিলেন সমাজের উন্নতির জন্য সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষা ব্যবস্থার। আর তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৪৯ সালে গড়ে উঠেছিল কল্যাণগড় বিদ্যামন্দির।
পরের বছরেই নারী শিক্ষার প্রয়োজনে গড়ে ওঠে অশোকনগরের প্রথম বালিকা বিদ্যালয় "কল্যাণগড় বালিকা বিদ্যালয়"। কিন্তু নিজস্ব স্কুল গৃহ না থাকার কারণে কল্যাণগড় বিদ্যামন্দিরেই সকালবেলা ইস্কুলটি চলত।
এরপর ১৯৫১ সালে "কল্যাণগড় বালিকা বিদ্যালয়" চলে আসে তাদের নতুন ভবনে। সুনামের সাথে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজ ৭৫ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বহু গৌরবময় ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে। এখনকার বহু কৃতি ছাত্রীরা দেশ-বিদেশে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে প্রতিষ্ঠানের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
৭৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বর্ষ ব্যাপী বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
৬ই মার্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবসে প্রাথমিক পর্যায়ের অনুষ্ঠানের শুভ সূচনায সকালে এক বিশাল সুসজ্জিত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা কল্যাণগড়ের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে। শোভাযাত্রার পুরোভাগে ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শ্রাবনী রায়, অশোকনগর কল্যাণগড় পৌরসভার পৌর প্রধান প্রবোধ সরকার, সি আই সি সদস্য সমীর দত্ত, কাউন্সিলর চিরঞ্জীব সরকার, প্রাক্তন বিধায়ক সত্যসেবী কর, স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি বিকাশ দাস সহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
এদিনের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় পায়ে পা মেলালেন হাজার হাজার বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রী, শিক্ষিকা এবং শুভানুধ্যায়ীরা। প্রক্তনীরা তাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে আবেগে ভাসলেন। এদিন বই মেলা এবং প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।
আগামী ১১ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে অডিটোরিয়ামের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি থাকছে ম্যাজিক শো, হস্তশিল্প মেলা, প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকদের আয়োজনে খাদ্য মেলা, থাকছে হস্ত শিল্প মেলা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির, চক্ষু পরীক্ষা শিবির এবং অবশ্যই বিদ্যালয়ের প্রাক্তনী দের মিলন উৎসব।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সহযোগিতায় বিশেষ অনুষ্ঠান, বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ক সেমিনার, এবং মরণোত্তর দেহদান ও চক্ষুদান শিবির।প্রতিদিনই থাকছে স্থানীয় এবং বহিরাগত শিল্পীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
পৌর প্রধান প্রবোধ সরকার বলেন "কল্যানগড় বালিকা বিদ্যালয়" বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতি মধ্যেই জেলা তথা রাজ্যের মধ্যে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। তিনি এই অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন এবং বলেন স্কুলের প্রয়োজনে সব রকম সহযোগিতা করতে তিনি প্রস্তুত।
প্রধান শিক্ষিকা শ্রাবণী রায় বলেন শিক্ষার মাধ্যমে মেয়েরা আগামী দিনে স্বাবলম্বী হয়ে উঠুক সমাজে মাথা উচু করে দাড়াক সেই চেষ্টাই করে যাবেন। তিনি সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় এবং সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের সাফল্য কামনা করেন।