দেশে প্রথম, ভেন্টিলেশনে থাকা সঙ্কটজনক করোনা রোগীর শরীরে প্লাজমা ট্রায়াল শুরু কলকাতায় - BBP NEWS

Breaking

শুক্রবার, ১২ জুন, ২০২০

দেশে প্রথম, ভেন্টিলেশনে থাকা সঙ্কটজনক করোনা রোগীর শরীরে প্লাজমা ট্রায়াল শুরু কলকাতায়


নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা: ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য গবেষণা। সফল হলে করোনা চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে এই শহর। দেশে প্রথম আজ, বৃহস্পতিবার, ভেন্টিলেশন সাপোর্টে থাকা সঙ্কটজনক ২ করোনা আক্রান্ত রোগীর শরীরে দেওয়া হল প্লাজমা। শুরু হলো প্লাজমা ট্রায়াল। প্রসঙ্গত, ICMR-র অনুমোদনে এর আগে মাইল্ড করোনা আক্রান্তের শরীরে প্লাজমা প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু সিভিয়ার রোগীর শরীরে এই প্রথম।

বৃহস্পতিবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত সঙ্কটজনক ব্যক্তির শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে প্লাজমা প্রয়োগ করা হল। যা পূর্ব ভারতের ইতিহাসে সর্বপ্রথম। দেশের ইতিহাসেও এই প্রথম ভেন্টিলেশনে থাকা করোনা আক্রান্ত সঙ্কটজনক রোগীর শরীরে প্লাজমা প্রয়োগ। রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বলা চলে একটা মাইলস্টোন। যদি এই প্লাজমা প্রয়োগে করোনা আক্রান্ত সঙ্কটজনক রোগী ভেন্টিলেশন থেকে বেরিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন, তাহলে নিঃসন্দেহে তা আগামী দিনে নতুন যুগের সূচনা করবে। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা

মাসখানেক আগে থেকেই একদল চিকিৎসক বিজ্ঞানী কাজ শুরু করেছিলেন। গত দু'সপ্তাহ ধরে করোনার সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে, এরকম ৪ জন উপযুক্ত দাতার শরীর থেকে সংগ্রহ করা হয় রক্তরস বা প্লাজমা। এরপর গত ২ দিন ধরেই চলছিল চূড়ান্ত প্রস্তুতির কাজ। রক্তের গ্রুপ ম্যাচিং, শরীরের বাকি বিভিন্ন প্যারামিটার বিবেচনা করে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকজন রোগীকে চিহ্নিত করা হয় প্লাজমা থেরাপি ট্রায়ালের জন্য।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বছর ৪৫-এর এক মহিলার শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে এই প্লাজমা। তিনি ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। ওই মহিলা একটি প্রাইভেট নার্সিংহোমের নার্স। তাঁর অনুমতি নিয়েই তাঁর শরীরে এই ট্রায়ালের প্রয়োগ করা হয়েছে। ২০০ মিলিলিটার সংগৃহীত প্লাজমা প্রয়োগ করা হয়েছে করোনা আক্রান্ত ওই নার্সের শরীরে। একইভাবে ৪৬ বছরের এক পুরুষের শরীরেও আজকে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি একটি হেলথ ক্লিনিকের গ্রুপ-ডি কর্মী। করোনা আক্রান্ত হয়ে তাঁরও অবস্থা বেশ সঙ্কটজনক। ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাঁকে। তাঁর ক্ষেত্রেও অনুমতি নেওয়ার পর তাঁর শরীরে ২০০ মিলিলিটার প্লাজমা প্রয়োগ করা হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই প্লাজমা বা রক্তরস কী? 

করোনা আক্রান্ত কোনও রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে পরবর্তী সময়ে তাঁর নানাবিধ শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয় যে তিনি কতটা সুস্থ আছেন। তারপর তাঁর শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করে দেখা হয় তাঁর শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি কতটা রয়েছে। চিকিৎসকেরা মনে করলে তখন তাঁর শরীর থেকে রক্তরস বা প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়।

আইসিএমআর-এর অনুমোদন নিয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজের ইনস্টিটিউট অফ হেমাটোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগ, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল ও ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজির যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্প শুরু হয়। এর আগে দেশে একাধিক জায়গায় প্লাজমা থেরাপি ট্রায়াল হয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রেই তা মাইল্ড করোনা রোগীর ওপর। কিন্তু কলকাতাযর ক্ষেত্রে প্রথমে সঙ্কটজনক নোভেল করোনা আক্রান্ত রোগীর শরীরে প্লাজমা দেওয়া হবে বলে ঠিক করা হয়।

বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে উপাধ্যক্ষ আশিষ মান্না বলেন, "নতুন যুগের সম্ভাবনার মুখে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। এই যে সূচনা ঘটল, এটায় যদি আমরা সফল হই, তাহলে বলা চলে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে নোভেল করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে। যেখানে যাঁদের মৃত্যু অবধারিত মনে করা হচ্ছিল, তাঁদের আমরা সুস্থ করে আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতো বাড়ি ফেরাতে পারব। আজকে আমাদের কাছে একটা অত্যন্ত গর্বের দিন। আমরা এর ফলের অপেক্ষায় রয়েছি।"
প্লাজমা দাতা কলকাতা মেডিকেল কলেজের পূর্ত বিভাগের ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার
প্রসঙ্গত, এই প্লাজমা ট্রায়াল প্রকল্পের মূল কাণ্ডারী হলেন ৫ জন- কলকাতা মেডিকেল কলেজের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রসূন ভট্টাচার্য্য, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান বিশ্বনাথ শর্মা সরকার, সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ করোনা চিকিৎসক যোগীরাজ রায় এবং শেখর রঞ্জন পাল এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজির প্রিন্সিপাল সাইন্টিস্ট দীপ্যমান গাঙ্গুলী। এদের নেতৃত্বেই কাজ করে চলেছেন একদল চিকিৎসক বিজ্ঞানী। যা সফল হলে করোনা চিকিৎসায় খুলে যাবে নয়া দিগন্ত।

Pages